পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে কর্মহারা হচ্ছেন হাজারো মানুষ; মাওয়া ঘাট
আসছে ২৫ জুন, শুভ উদ্বোধন বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। এই সেতুটিকে ঘিরে আনন্দ, উছ্বাস আর উল্লাসের শেষ নেই কারো। তবে পদ্মার মাওয়া ঘাটের কিছু মানুষের মুখে নেই এই আনন্দ আর উল্লাসের তেমন কোনো রেশ। কারণ, পদ্মার উদ্বোধনে কর্মহারা হবেন তারা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে কর্মহারা হচ্ছেন হাজারো মানুষ |
১৯৮৬ সালে শুরু হয় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের ফেরি চলাচল। এর সাথে সাথে চলতে শুরু করে ছোট বড় লঞ্চ, স্টিমার আর নৌকা। আর তখন থেকেই ঢাকার সাথে দেশের দক্ষির বঙ্গের প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। কিন্তু, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পালটে যাচ্ছে এই দৃশ্যপট। কারণ, সেতু চালু হলে কেউ আর কষ্ট করে আর রিস্ক নিয়ে পার হতে যাবে না ফেরি। যাবে সবাই পদ্মার ব্রিজ দিয়ে। বড় বড় ফেরি বা লঞ্চ গুলো হয়তো বা অন্য কোনো ঘাটে চলে যাবে। কিন্তু যারা বছরের পর বছর স্থানীয় ভাবে এখানে যাত্রী পারাপারে কাজ করেছেন তারা যাবেন কোথায়??
মাওয়া ঘাটে কর্মরত হাজারো মানুষ আছেন। প্রকাশ করছেন তারা তাদের মনোভান, মনের কথা। কেউ বলছেন, এখনো আমরা সিদ্ধান্ত পায়নাই যে ব্রিজ উদ্বোধন হওয়ার পর আমাদের কোথায় সিফট করবে। তবে মাওয়া ঘাটকে আমরা আসলেই অনেক মিস করব। এখানকার মানুষজন অনেক ভাল ছিল। আবার কেউ বলছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু আমাদেরও পদ্মা সেতু। কিন্তু, আমাদের এই পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের হয়ে গেছে দুঃস্বপ্ন। কারণ, আমাদের এই কাজের জায়গা আর থাকবে না। অন্য কেউ বলছেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে এতে হয়তো আমাদের কিছু মানুষের ক্ষতি হবে তবে অন্যান্য হাজার-হাজার মানুষের ভাল হবে। কিন্তু আমরা এখানে যে ব্যবসা নিয়ে আছি, জানি না ভবিষ্যৎ এ কি করব।
অনেকে আবার আছেন আতঙ্কে জানালেন তারা নিজেরাই। তারা জানে না যে, ব্রিজ চালু হয়ে গেলে তারা কি করবে। অনেকে পড়েছেন সংসারের চিন্তায়। কিভাবে চলবে তাদের সংসার। এত - এত মানুষ তারা যাবে কোথায়? যে পদ্মার বুকে ছিল তাদের বাস ছিল তাদের আয় রোজগার, সেই পদ্মায় যদি তারা কাজ না করতে পারে তাহলে তারা করবে কি? এ প্রশ্ন প্রত্যেকের মুখে মুখে।
মাওয়া ঘাটের থেকে কিছুটা দ্রুত নদী পারাপারের জন্য অনেকে ভরসা করেন ছোট খাট বিভিন্ন লঞ্চের উপর। মাওয়া ঘাটকে কেন্দ্র করে চলে প্রায় ১০০ টি লঞ্চ যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় ৫০০ টির ও বেশি পরিবার। এছাড়াও চলাচল করে ২০০ টির ও বেশি স্পিড বোট। পদ্মা সেতুকে নিয়ে তারা সবাই খুশি কিন্তু প্রশ্ন হল এরপর তারা করবে কি?
এই মাওয়া ঘাটকে আগলে ধরে কর্মরত আছেন নানা শ্রেণির ও নানা পেশার মানুষ। কেউ করেছেন হোটেল, কেউ করেছেন মুদি দোকান, কেউ করেছেন চায়ের দোকান, কেউ করেছেন ফলের দোকান আবার কেউ বা করেছেন ভ্রাম্যমান বিভিন্ন খাবারের দোকান। পদ্মা সেতু উদ্বোধন এর পর ভাটা পড়বে তাদের সবার ব্যবসায়। কারণ একটাই, সেতু চালু হলে কেউ আর আসবে না সেই চির-পরিচিত মাওয়া ঘাটে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন এর বাকী আছে আর মাত্র অল্প কয়েকটা দিন। আর মাওয়ায় খেটে খাওয়া আর কর্মরত এসব মানুষ গুলো তাই গুনছেন দিন। আর করতে পারবেন না কাজ তারা তাদের স্বপ্নের মাওয়া ঘাটে। অনেকে মনে কষ্ট নিয়ে যাবেন এখান থেকে বিদায় বেলায়। তবে কথা হল তাদের কাজ চায়। কাজ না পেলে তারা যাবেই বা কোথায়।
তাই তাদের দাবি সরকার যেন তাদের প্রত্যেকের একটি করে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। অথবা পদ্মার এই মাওয়া ঘাটে যেন একটা পর্যটন শিল্প গড়ে দেওয়া হয়। যাতে এখানে ঘাট পারাপারের জন্য না হলেও অন্তত মানুষজন এখানে ঘুরতে আসে। তাহলেও অন্তত তারা এই মাওয়া ঘাটে টিকে থাকতে পারবে।
Thanks for update.
উত্তরমুছুনভালো হয়েছে
উত্তরমুছুনGood perception.
উত্তরমুছুন