সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে বীর ফায়ার ফাইটারদের গল্প
ফায়ার ফাইটার্স, তারা নিজের জীবন বাজি ধরতে প্রস্তুত সব সময়ই। যেকোনো প্রকার অগ্নিসংযোগ কিংবা অন্য কোনো দূর্ঘটনা সব জায়গাতেই তাদের তৎপরতা। নিজের পরিবার-পরিজন রেখে ছুটে চলেন দেশ-বাসীর কল্যাণে। যে কোনো প্রকার বিপদের সম্মুখে তারা যেন অকুতোভয় সৈনিক।
বীর ফায়ার ফাইটার্সদের গল্প |
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ডে দেখা গেছে ফায়ার ফাইটার্সদের সাহসী তৎপরতা। আগুন লাগার খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে যান সেখানে তারা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে একের পর এক স্টেশন থেকে আসতে থাকেন তারা। এভাবে মোট ২৫ টি ইউনিট এসে ঝাপিয়ে পড়েন জীবন-মরণের এই যুদ্ধক্ষেত্রে।
সবার
আগে অগ্নিসংযোগ এর খবর পেয়ে
ঘটনাস্থলে আসেন চট্টগ্রামের কুমিরা
স্টেশন এর ফায়ার ফাইটার্সরা। ডিউটিতে থাকা ১৫ জনই
২ টি ইউনিটে বিভক্ত
হয়ে আসেন ঘটনাস্থলে। সাধারণ
আগুন ভেবেই খুব নিকট থেকেই
চালাতে থাকেন আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা।
কিন্তু, তারা তো আর
জানতেন না যে, সেখানে
ছিল রাসায়নিক পদার্থের সরবরাহ।
এক পর্যায়ে বিকট একটা আওয়াজে
লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সব
কিছুই। প্রথম বিস্ফোরণেই কুমিরা স্টেশন এর ১৫ ফায়ার
ফাইটার্স এর মধ্যে ১৪
জনই ছিটকে পড়েন অনেক দূরে।
এতে প্রাণ হারান কুমিরা স্টেশন এর ১৫ জনের
মধ্যে ৫ জন। গুরুতর
আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন
আরো ৭ জন এবং
২ জনের সন্ধান এখনো
মিলেনি। শুধু ভাগ্যের পরিক্রমায়
অক্ষত অবস্থায় ফিরেছেন ১ জন। তিনি
হলেন ফায়ার ফাইটার্স বাপ্পি।তিনি বলছেন, তিনি কিছুটা দূরে
থাকায় এ যাত্রায় বেচে
গেছেন তিনি। তবে তার চোখের
সামনে এখনো ভেসে উঠছে
সেই চিত্র। এক সাথে তিনি
হারিয়েছেন তার ৫ সহকর্মীকে।
আর হাসপাতালে রেখে এসেছেন আরো
৭ জন সহকর্মীকে। এবং
খুজে চলেছেন আরো ২ সহকর্মীকে
যাদের সন্ধান এখন পর্যন্ত মেলেনি।
ট্রেনিং এ থাকায় কুমিরা
স্টেশন এর লিডার আতিকুর রহমান ছিলেন বাইরে।
বিভীষিকাময় এ দৃশ্য ভুলবার নয় কখনও। ১৯৮১ সালে অধিদপ্তর করার পর একসাথে এত প্রান হানী দেখল ফায়ার ফাইটার্স, দেখল বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৪১ বছরে ফায়ার ফাইটার্স নিহত হয়েছেন ১৭ জন। আর বি এম ডিপোর ১ আগুনেই মারা গেলেন ৯ জন ফায়ার ফাইটার্স যা কখনো ভুলবার নয়।
বলা
হচ্ছে ভূল তথ্য দেওয়ার
কারণে এত হতাহত। ফায়ার
ফাইটার্স দের বলা হয়েছিল
যে, কাপড়ে আগুন লেগেছে। আর
সেখানে যে দাহ্য কেমিকেল
ছিল তাও বলা হয়নি।
তাই ফায়ার ফাইটার্সরা সাধারণ আগুন ভেবেই তেমন
কোনো সেফটি না নিয়েই চলে
যান আগুন নেভাতে। কেমিকেলে
আগুন লাগলে কমপক্ষে ৪৫ মিটার দূর
থেকে আগুন নেভানোর কথা।
কিন্তু এ তথ্য ফায়ার
ফাইটার্সদের না দেওয়াতে তারা
খুব কাছ থেকেই চেষ্টা
করছিলেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার।
কিন্তু ঘটে বিপরীত ঘটনা।
বিরল
এ দৃশ্য মন থেকে মুছতে
পারছেন না বেচে ফেরা
ফায়ার ফাইটার্সরা। চোখের সামনে সহকর্মীর মৃত্যু, ক্ষত-বিক্ষত শরীর
দেখেও বিচলিত হননি তারা। তাদের
প্রত্যেককেই দেখা গেছে "অকুতোভয়
সৈনিক" হিসেবে। সীমাবদ্ধতা নিয়েও লড়ে গেছেন প্রাণপণে।
সহকর্মীর নিষ্প্রাণ দেহ নিয়ে করেছেন নিরব শোভাযাত্রা। এরপর আবার নেমেছেন কাজে। তাদের কারো মধ্যে নেই কোনো আহাজারি কিংবা নেই কোনো শেষ বিদায়। চোখের কোনায় অশ্রু লুকিয়ে, মনকে শক্ত করে আর বুকে পাথর বেধে চালিয়ে গেছেন তারা উদ্ধার কাজ।
আগুন
যখন তীব্র থেকে অতি তীব্র
আকার ধারণ করছে বীর
ফায়ার ফাইটার্সরা যেন আরো গর্জে
উঠছে। কোনো ভাবেই থেমে
থাকেননি তারা। ফায়ার ফাইটার্সদের অক্লান্ত চেষ্টা, জীবন বাজি রেখে
লড়াই আর মৃত্যুকে আলিঙ্গন
করার দৃষ্টান্ত এ যেন নজীরবিহীন
এক ঘটনা। কর্মরত অবস্থায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে মা,বাবা,সন্তান কিংবা
স্ত্রীর ছবিটা। তবুও বুকে পাথর
বেধে করে গেছেন কাজ।
মনে প্রশ্ন তাদের একটায়, তারা না করলে
করবে কে?
নিজের
সহকর্মীর লাশ পাশে রেখেও
যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন আগুনের বিরুদ্ধে। একথা ভাববার সময়ই
পাননি যে, যদি তার
অবস্থাও তার সহকর্মীর মত
হয়? যদি তাকেও শুতে
হয় নিথর দেহ নিয়ে
মাটিতে?
""এমন
দূর্দান্ত সাহস আর মৃত্যুকে
জয় করার ক্ষমতা থাকে
না সবার যা ছিল
ফায়ার ফাইটার্স ভাই তোমাদের। স্যালুট
জানাই প্রিয় ফায়ার ফাইটার্স ভাইদের। অকুতোভয় সৈনিক তোমরা, তোমরা বাংলার বীর। নিজের জীবনকে
উৎসর্গ করার মত এয়
বড় বিবেক নেই আমাদের, যা
আছে, ছিল আর থাকবে
তোমাদের। জয় হোক বাংলার
মানুষের, জয় হোক বাংলার,
জয় হোক প্রিয় ফায়ার ফাইটার্স ভাইদের। আমরা কৃতজ্ঞ তোমাদের
কাছে। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো তোমাদের জন্য।""
👉আমাদের এই ফেসবুক পেজটি লাইক ও ফলো করুনঃ 𝐀𝐟𝐭𝐞𝐫𝐋𝐢𝐟𝐞⌛পরকাল
আরো পড়ুনঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে ভয়াবহ আগুন
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র সহায়তা চায় ইউক্রেন; রাশিয়া-ইউক্রেন সর্বশেষ খবর
কোন মন্তব্য নেই