শেষ হচ্ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ।পদ্মা সেতুর বর্তমান অবস্থা ২০২২
শত জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এবছরের জুনে শেষ হবে সেতুর সম্পূর্ণ কাজ আর ডিসেম্বরে চলবে যানবাহন।
পদ্মা সেতুর বর্তমান অবস্থা ২০২২ |
বর্তমানে পদ্মা সেতুর সব মিলিয়ে ৯৫% কাজ শেষ। যান ও রেল চলাচলের রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ শেষ। এখন শুধু করা হচ্ছে রাস্তার ল্যাম্পোস্ট গুলোয় বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ। এর পাশাপাশি দক্ষিণ বঙ্গের জন্য সেতুতে চলছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, অপটিক্যাল ফাইবার দেওয়ার কাজ।
পদ্মা সেতুর খরচ কতঃ
প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য দেশ থেকে আর্থিক সহায়তায় করা হবে পদ্মা সেতুর কাজ। তবে সে গুড়ে বালি পড়েছিল অনেক আগেই। বাংলাদেশ নাকি দুর্নীতিতে অনেক এগিয়ে। এই বলে বিশ্ব ব্যাংক পিছিয়ে যায় অর্থ সরবরাহ থেকে। এরপর বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা বিদেশী অর্থায়ন ছাড়াই করবে পদ্মা সেতুর কাজ। বিশ্বকে তারা দেখাতে চায় কোনো রকম সাহায্য সহযোগীতা ছাড়াও বাংলাদেশ মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা করে পদ্মা সেতুর জন্য। আর সেই বাজেটেই শেষ হতে চলেছে পদ্মার কাজ।
সুতরাং, পদ্মা সেতুর মোট খরচ হল ৩০ হাজার কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু কত কিলোমিটারঃ
পদ্মা সেতু মোট ৬.১৫ কিলোমিটার। সেতুর মাওয়া প্রান্ত ১.৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আর জাজিরা প্রান্ত ১.৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এবং ১৮.১৮ মিটার প্রশস্থ।
পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছরঃ
পদ্মা সেতুতে খরচ করা হয়েছে আকাশচূম্বী পরিমাণ অর্থ। আর সরকার বা জনগণ কখনোই সেই অর্থ বিফলে যেতে দিবেনা। তাই বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও দেশীয় ইঞ্জিনিয়ার এবং লোকবলের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সেতুর বয়স ধরা হয়েছে ১০০ বছর। তবে নিঃসন্দেহে এটার বয়স হবে ১০০ বছরেরও বেশি আশা করা যায়।
পদ্মা সেতুর উচ্চতা কতঃ
পদ্মার গভীরতা প্রায় ১৩ তলা বাড়ির সমান। খরস্রোতা নদী হওয়ায় এখানে পিলার করতে হয়েছে অনেক কষ্ট করে। প্রতিটা পিলারের উচ্চতা প্রায় ৪০ তলার সমান। আর পানির পৃষ্ঠ থেকে পদ্মার উচ্চতা হল ৬০ ফুট।
পদ্মা সেতুর স্প্যান কয়টি বসানো হয়েছেঃ
পদ্মা সেতুর জন্য বসানো হয়েছে মোট ৪১ টি পিলার বা স্প্যান। প্রতিটা স্প্যানের ওজন প্রায় ৩.৫ মেট্রিক টন।
পদ্মা সেতু কোথায় অবস্থিতঃ
পদ্মা সেতু মুন্সিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এর এক প্রান্ত জাজিরা প্রান্তে ও অন্য প্রান্ত মাওয়া প্রান্তে অবস্থিত।
পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতুঃ
বিশ্বের টপ ১০ সেতুর মধ্যে ৭ টা সেতুই শুধু চীনে অবস্থিত। পদ্মার আগেও নির্মাণ হয়েছে অনেক বড় বড় সেতু। এ তালিকায় সুইডেনের অল্যান্ড সেতুকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ দখল করে নিয়েছে ১২২ তম স্থান। অর্থাৎ পদ্মা সেতু বিশ্বের মধ্যে ১২২ তম বড় বা দীর্ঘ সেতু।
পদ্মা সেতুর টোল তালিকা ২০২২
যানবাহন টোল ফি
১.মোটর সাইকেল ১০০ টাকা
২.কার-জীপ ৭৫০ টাকা
৩.পিকআপ ১২০০ টাকা
৪.মাইক্রোবাস ১৩০০ টাকা
৫.মিনি বাস ১৪০০ টাকা
৬.মাঝারি বাস ২০০০ টাকা
৭.বড় বাস ২৪০০ টাকা
৮.ছোট ট্রাক ১৬০০ টাকা
৯.মাঝারি ট্রাক ২১০০-২৮০০ টাকা
১০.ট্রাক ৫৫০০ টাকা
১১.বড় ট্রাক ৬০০০ টাকা
পদ্মা সেতুর সম্ভাব্য আয়ঃ
প্রতিদিন আয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। মাসে ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। আর বছরান্তে ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে আরো কিছু কথা ও পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানঃ
পদ্মা সেতুর প্রস্তাব পেশ করা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আর পদ্মা সেতুর কাজ আরম্ভ হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে।পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় হল ৩০ হাজার কোটি টাকা।পদ্মা নদী খুবই স্রোতস্বিনী। আর তাই পদ্মা সেতু করতে ভোগ পোহাতে হয়েছে অনেক। পদ্মার গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার। যা একটি ১৩ তলা বিল্ডিং এর সমান। খরস্রোতা নদী হওয়ায় পদ্মার তলদেশ থেকে ৬৫ মিটার পর্যন্ত পানি ও বালি সরে যাওয়ার রেকর্ড আছে। তাই খুব হিসাব-নিকাশ করেই বানাতে হয়েছে সেতুটি। পদ্মার প্রতিটা পিলারের উচ্চতা রাখা হয়েছে প্রায় ১২০ মিটার বা ৪০ তলা ভবনের সমান। পদ্মার স্প্যান সংখ্যা ৪১ টি আর লেন হল ৩ টি।
পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে রাজধানী ঢাকার। এছাড়াও মোংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থল বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের। এতে করে ২-৪ ঘন্টা সময় কমবে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলার যাতায়াত ব্যবস্থায়। জিডিপি বাড়বে ২.৩ শতাংশ।
বর্তমানে যান চলবে দিনে ২৪ হাজার। এ সংখ্যা ২০৩০ সালে হতে পারে দিনে ৩০ হাজার। সেতুটি নির্মাণ করতে আনা হয়েছিল চীন থেকে ইনঞ্জিনিয়ার।
যাইহোক, পরিশেষে আমরা আজ গর্ব করে বলতে পারি, আমরা আজ শত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে সক্ষম হয়েছি স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে। কোনো বিদেশি কলঙ্ক বা অন্য কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি আমাদের। আমরা বাঙালি। আমাদের আছে অনন্য সাহস আছে প্রতিভা। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁর এই উদ্যোগ যথার্থ ও প্রশংশিত।
জয় হোক বাংলার, জয় হোক বাঙালির। বাংলাদেশ এগিয়ে চল।
কোন মন্তব্য নেই