যুব সমাজ বিপর্যস্ত টিকটকে, বাড়ছে একেরপর এক কিশোর গ্যাং
বিশ্বের তরুণ-তরুণী আর যুবক-যুবতী মেতেছে এখন টিকটকের নেশায়। বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে রয়েছে লাখ-লাখ টিকটক ইউজার। টিকটকের নেশায় মেতেছে লাখ-কোটি ছেলে-মেয়ে। যারা ভাবে না তাদের ভবিষ্যত নিয়ে। তাদের শুধু একটাই নেশা টিকটকে ভাইরাল হওয়া। এর জন্য যদি করতে হয় চুরি কিংবা ডাকাতি, তাতে রাজি তারা। যদি করতে হয় মারামারি আর খুন খারাপি তাতেও রাজি তারা। তবুও তাদের ভাইরাল হতেই হবে।
টিকটক আতঙ্কে বাংলাদেশ |
টিকটক ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অফিসিয়ালি লঞ্চ হয়। প্রথম দিকে অ্যাপটিকে তেমন না চিনলেও বা না ব্যবহার করলেও হাল ছাড়েনি এর ডেভেলপাররা। তারা দিনের পর দিন চেষ্টা চালাতে থাকে টিকটককে ভাইরাল করার। অনেক চেষ্টার পর তাদের পরিশ্রম সফল হয়। প্রায় দুই বছর পর,২০১৮ সালের আগস্টে তাদের টিকটক অ্যাপটি ভাইরাল হয়। যদিও প্রথমে টিকটক এর নাম ছিল মিউজিক্যালি কিন্তু পরে নাম দেওয়া হয় টিকটক।
বাংলাদেশে টিকটক মুলত ভাইরাল হয় ২০২০ সালে। কিন্তু এখন বাংলাদেশে এর অনেক ইউজার রয়েছে।এখন এই টিকটক কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের যুব সমাজের। একের পর এক অন্যায় আর অশ্লীল সব কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে এর ব্যবহারকারিরা।
আজ নাটরের একটি স্কুলে টিকটক করার অপরাধে ৩ শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়া হয়েছে স্কুল থেকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ ৩ শিক্ষার্থী সহ তাদের সাথে আরো অনেকে স্কুল ভাঙচুর করেছে। ঘটনা সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় পুলিশ।
গত কয়েক মাস আগে নারায়নগঞ্জের এক তরুণ টিকটক করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়।
গত জানুয়ারিতে রাজধানীর একটি আইটি ইন্সটিটিউট এর অফিসে চুরি করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ে কয়েকজন যুবক। জানা যায়, তারা টিকটক করার জন্য অর্থের জোগান দিতে বাধ্য হয়েই করেছে চুরি।
গত বছরের শেষের দিকে শোনা যায় হৃদয় বাবু নামের এক টিকটকার তারকা বানানোর নাম করে মেয়েদেরকে নিয়ে বেচে দিত ইন্ডিয়ায়। ৩ মাস বন্দি থাকার পর একটা মেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে এবং ঐ পাচারকারী ও তার অন্য দুই সহযোগীর নামে মামলা করলে পরে এর সত্যতা বেরিয়ে আসে।
ইদানিং দেখা যায় অনেকে হাতে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ে টিকটক ভিডিও বানায়। এতে যুব সমাজের ব্যাপক অবক্ষয় হচ্ছে।
কয়েকমাস আগে দেখা যায়, র্যাগ ডে তে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদায় বেলায় গায়ের টি-শার্টে অকথ্য ভাষায় লেখা লিখে ও পাগলা ডান্স করে। এরমকটা যেন এখনকার ফ্যাশন।
সবচেয়ে আতঙ্কের ব্যাপার যেটি, সেটি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। টিকটক করতে গিয়ে পরিচয় হয় একজনের সাথে আরেকজনের। শুধু তাই নয়। এর জন্য লাগে আলাদা-আলাদা স্বতন্ত্র গ্রুপ বা দল। যেখানে একেক গ্রুপে থাকে ১০-১০০ জন পর্যন্ত। আর এখান থেকেই তৈরি হয় কিশোর গ্যাং। এ মাসেই একটি কিশোর গ্যাংকে ধরে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের অপরাধ ছিল খুন করা। ২০১৮ সালে একটি কিশোরীকে উত্তক্ত করলে একটি যুবক তার প্রতিবাদ করে এবং এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে। উক্ত কিশোর গ্যাঙের ১৭জনকে আদালত ৭ বছর করে কারাদন্ড দেয়। যদিও এই কিশোর গ্যাঙটি টিকটকার নয়। তবে টিকটকার কিশোর গ্যাংরাও এমনই ভায়ানক।
টিকটকের জন্য নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। ক্ষুন্ন হচ্ছে পড়ালেখার মান। সবাই যখন টিকটক নিয়েই ব্যস্ত, তখন তাদের ক্লাসের সময়ই বা কোথায়? টিকটকের জন্য পরিবারে বাড়ছে অশান্তি। টাকা চুরি করা, স্কুলে না যাওয়া বা কাউকেই পরোয়া না করা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখনকার স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। প্রতিবন্ধী মুলক আচরণ এই টিকটক ব্যবহারের অন্যতম একটি খারাপ দিক।
বাড়ছে সমাজে তথা দেশে টিকটক এর ব্যবহার। এর ব্যবহার যত বাড়বে, তত বাড়বে অন্যায় আর বিশৃঙ্খলা। তৈরি হবে নতুন-নতুন কিশোর গ্যাং।টিকটকের আড়ালে লুকিয়ে আছে শত অপরাধ আর অন্যায়। তাই সমাজ ও দেশকে বাচাতে হলে আমাদের যুব সমাজকে এর থেকে বের করে আনতে হবে। সুস্থ্য সুন্দর বিনোদনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আসুন যুবক ভাইয়েরা আমরা সচেতন হই ও সমাজ ও দেশকে রক্ষা করি।
আরো পড়ুনঃ
বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০, আহত হয়েছে প্রায় ২০ জন
মাত্র ৫ বছরের শিশু বাচ্চার আয়ে চলে সংসার, ভাগ্যের করুন পরিণতি
সেরা দামে ভিভো Y33s, গেমারদের জন্য সেরা চয়েস
কোন মন্তব্য নেই